Sun Sun Sun Sun Sun
English

শিক্ষাঙ্গনের পবিত্রতা রক্ষায় ছাত্রসমাজের ভূমিকা

|| এম হেলাল ||
ছাত্রসমাজ হচ্ছে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ, আগামী দিনের যোগ্য কর্ণধার। যে দেশ বা জাতি যত উন্নত ছাত্রসমাজ লাভ করবে, সে দেশ বা জাতির কর্ণধারও হবে তত সুযোগ্য। কাজেই জাতীয় এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে ছাত্রসমাজের গুরুত্ব কতখানি, সে বিষয়ে নতুন কিছু বলার অবকাশ রাখে না।

আমরা জানি- শিক্ষাঙ্গন হচ্ছে সেই বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান যেখানে একজন বিধিবদ্ধভাবে ছাত্র হতে পারে। ছাত্রের পরিচয়ের জন্য তাই শিক্ষাঙ্গনের প্রয়োজন সবার আগে। ব্যাপারটা এমন ধরে নেয়া যায় যে- শিক্ষাঙ্গন ব্যতীত ছাত্রসমাজের বিধিবদ্ধ পরিচয় একান্তই কল্পনাপ্রসূত। আর তাই শিক্ষাঙ্গন হচ্ছে ছাত্রসমাজের চারণভূমি, লালন ক্ষেত্র এবং ছাত্রদের বৈধ পরিচয়পত্র দাতা। অর্থাৎ শিক্ষাঙ্গনকে যদি বলা যায় উৎপাদনের মাঠ তাহলে ছাত্রসমাজ হবে তার ফসল। তাই শিক্ষাঙ্গনে একজন যেমন লাভ করে ছাত্রের পরিচয়, তেমন তার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশও এখানে ঘটানো সম্ভব হয়, সাথে সেও হয়ে উঠতে পারে ভবিষ্যতের সুযোগ্য নাগরিক, আগামী দিনের সফল কর্ণধার।

সুতরাং ছাত্রসমাজ ও শিক্ষাঙ্গন হচ্ছে, পরষ্পর সম্পূরক ও পরিপূরক। একটি ভিন্ন অন্যটির উপস্থিতি কিংবা বিকাশ সম্ভব নয়। একটিকে ছাড়া অন্যটির কোন গুরুত্বও নেই। ফসল যেমন মাঠকে আগলে রাখে ছাত্রসমাজের কর্তব্যও হচ্ছে তেমনভাবে শিক্ষাঙ্গনকে আগলে রাখা। শিক্ষাঙ্গন যেমন ছাত্রসমাজকে যোগ্য করে তুলতে পারে, তেমনি ছাত্রসমাজও শিক্ষাঙ্গনের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার ক্ষেত্রে কিংবা শিক্ষাঙ্গনের পবিত্রতা রক্ষার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অন্য যে কোন পক্ষের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

তবে এও সত্য যে, দেশ ও জাতি থেকে শিক্ষাঙ্গন কোন বিচ্ছিন্ন দ্বীপাঞ্চল নয়। কাজেই দেশ ও জাতিকে পবিত্র রাখার সঙ্গে শিক্ষাঙ্গনের পবিত্রতা রক্ষার বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেশ যদি অস্থিরতার শিকার হয়, জাতি যদি অসুস্থতায় ভোগে, সর্বস্থানে যদি সংকট দৃশ্যমান হয়ে ওঠে- তাহলে ছাত্রসমাজ কেন, অন্য কোন শক্তিশালী গোষ্ঠীর কাছেও শিক্ষাঙ্গনের পবিত্রতা রক্ষার দায়ভার অর্পিত হলে সে গোষ্ঠীও এ কর্মে ব্যর্থ হবে, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

শিক্ষাঙ্গন হচ্ছে শিক্ষাচর্চার অঙ্গন। দেশের জনসমষ্টির সচেতন একটি বিরাট অংশ এ অঙ্গনের সাথে সংশ্লিষ্ট। আর এ সচেতন অংশ যদি গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে না গিয়ে বরং শিক্ষাঙ্গনের ভাবমূর্তি রক্ষার ব্যাপারে সচেতন থাকে তাহলে সেখানে অপবিত্রতার অনুপ্রবেশ সম্ভব নয়। পরন্তু এ অঙ্গনের ফসল তথা ছাত্রসমাজের রয়েছে অশুভ কোন কিছুকে ঠেকিয়ে রাখার ক্ষমতা, রয়েছে গড়ে তোলার ক্ষমতা।

কাজেই ছাত্রসমাজ তাদের ঐ শক্তির সদ্ব্যবহার করে শিক্ষাঙ্গনের পবিত্রতা রক্ষা করতে পারে। ছাত্রদের সর্বক্ষেত্রেই স্মরণ রাখা উচিত যে- তারা ছাত্র, দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। জাতীয় কোন দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায়ও কোন রকম নৈতিক স্খলনের শিকার হওয়া শুধু তাদের অনুচিতই নয়, বরং তা হবে স্বহস্তে নিজ মুখে কলংকের কালিমা লেপন করা। অপবিত্রতা নয়, পবিত্রতাই হচ্ছে শিক্ষার ভূষণ। আর এ ধারণাকে বাস্তবে পরিণত করার দায়িত্ব ছাত্রসমাজেরই। কাজেই, শিক্ষাঙ্গনের পবিত্রতা যদি কোনভাবে ক্ষুন্ন হয়, দেশ ও জাতি তাদের কখনোই ক্ষমা করবে না।

শিক্ষাঙ্গন শিক্ষার্থীদের অঙ্গন। কিন্তু শিক্ষার্থী কারা? ছাত্ররাইতো, দেশ ও জাতি যাদের কাছে আগামী দিনের নেতৃত্ব আশা করে তারাই তো- যারা সচেতনতায় ধন্য, সংখ্যায় ব্যাপক, প্রত্যাশা পূরণে যথেষ্ট, পরিচয়েও বড়। এখন তাদের কি করণীয়? করণীয় কি দলীয় সংকীর্ণতা নিয়ে পড়ে থাকা? হানাহানি, হিংসা, বিদ্বেষে নিজেদের অস্তিত্বকে ঘৃণিত করা, আরব্ধ কর্ম সম্পাদনে গাফিলতি করা, জাতির আগামী দিনগুলোকে কি অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া, না জাতির প্রত্যাশা পূরণের ব্যবস্থা করা; তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুসম্পন্ন করা? যদি জাতির প্রত্যাশাই পূরণ করতে হয়, যদি তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুসম্পন্ন করতে হয়, যদি জাতিকে আলোর পথ দেখাতে হয়, তাহলে তাদের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে তাদের লালনভূমি, চারণক্ষেত্র যে শিক্ষাঙ্গন- তার পবিত্রতা রক্ষা করা। এ দায়িত্ব পালন করতে গেলে কোন রকম সংকীর্ণতাকে স্থান দেয়া উচিত নয়। দেশ ও জাতির স্বার্থে, একটি সুসভ্য পরিচয়ের স্বার্থে ছাত্রসমাজের কর্তব্য নির্ধারণ করা উচিত। এটা সত্য যে, ছাত্রসমাজ যদি দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে, একটা সুসভ্য পরিচয়ের স্বার্থে নিজেদের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব পালন করে, তাহলে তার চারণভূমি, তার লালনক্ষেত্র শিক্ষাঙ্গনের পবিত্রতা রক্ষা করা সম্ভব হবে -তা দিবালোকের মত সুস্পষ্ট। পরিশেষে বলতে হয় যে- শিক্ষাঙ্গন যেহেতু ছাত্রদের অঙ্গন, তাদেরই প্রতিষ্ঠান- এর পবিত্রতা রক্ষায় ছাত্রদের ভূমিকাই মুখ্য। আর এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য ছাত্রসমাজকে হতে হবে আপোষহীন, নির্ভীক। আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা রক্ষা, তারপর অন্যকিছু। নইলে জাতি হিসেবে আমাদের শুধু অনুন্নতই থাকা হবে না, দেশ নিমজ্জিত হবে অন্ধকারের অতল গহ্বরে।

(১৯৮৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় মুদ্রিত)