Sun Sun Sun Sun Sun
English

যুবসমাজের আত্মকর্মসংস্থান

|| ড. এম হেলাল ||
যুবসমাজ হচ্ছে দেশ ও জাতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। এই শক্তির সঠিক ব্যবহারে দেশ উন্নত হয়, জাতিসত্তার বিকাশ ঘটে, সমাজ জীবনের সকল জটিলতার অবসান হয়, সামাজিক পরিবর্তন সাধনও সম্ভবপর হয়ে ওঠে। তাই দেখা গেছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, তার পেছনে এই যুব সমাজই মোক্ষম ভূমিকা পালন করেছে। জাতীয় অগ্রগতি তথা সার্বিক উন্নয়নেও যুব সমাজকেই ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে হয়েছে। বর্তমান বিশ্ব ক্রমান্বয়ে জনসংখ্যার বিস্ফোরণে স্ফীত হয়ে উঠেছে। আর ঐ স্ফীতি যে কোন দেশের জন্য এক বিরাট সমস্যা হয়েও দাঁড়িয়েছে। এখন অধিকাংশ দেশের পক্ষে এই বিরাট জনসংখ্যাকে কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দেখা যাচ্ছে, বেকার ও অর্ধ-বেকারের হার দিনকে দিন বেড়েই চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশেও এখন লাখ লাখ লোক বেকার দেখা যাচ্ছে। আর আমাদের বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আসলে তো এই বেকারত্বের চিত্র আরো ভয়াবহ রূপে প্রতিফলিত হয়। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী থেকে শুরু করে অক্ষর জ্ঞানহীন হাজার হাজার লোক বেকারত্বের অসহনীয় দুর্দশায় দিনাতিপাত করছে। ফলে একটি শূন্য পদে একজন লোক নিয়োগের জন্য আবেদন চাওয়া হলে হাজার খানেক আবেদন পত্রও জমা হতে দেখা যায়। আবার এই বেকারত্ব এক ধরনের হতাশার জন্ম দিচ্ছে। মাদকাসক্তির জন্মও এ সূত্র থেকে। তাছাড়া বিপথে গমন বা অপরাধ সংগঠনের পেছনে হতাশাই অনেকাংশে কাজ করে।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে- এই যে হাজার হাজার লোক বেকার, তার একটা বড় অংশ হচ্ছে যুবসমাজ। মাদকাসক্ত বা বিপথগামীদের মধ্যেও সংখ্যাগরিষ্ঠ হচ্ছে এই যুবসমাজ। দেশ ও জাতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি যে যুব সমাজ, তাদের এ দৈন্যদশা সত্যি নিদারুণ এবং অনভিপ্রেত।

এখন আসা যাক- স্বেচ্ছা কর্মসংস্থানের বিষয়ে। এটা প্রমাণিত সত্য যে, কাজ থাকলে গতি থাকে। আর গতি মানেই জীবন, যেখানে হতাশার কোন অবকাশ নেই। পাশাপাশি এটাও সত্যি- বর্তমান বিশ্বের যে অবস্থা, তাতে সকলের জন্য কর্মসংস্থান করা সম্ভব নয়। কিন্তু তাই বলে কি যাদের কাজের ব্যবস্থা করা হবে না, তাদেরকে হতাশার জন্যে নির্ধারিত বিধিলিপির কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে? আমরা বলতে চাই, মোটেও আত্মসমর্পণ করা যাবে না। আত্মসমর্পণ মানেই তো হেরে যাওয়া, জীবন থেকে নির্বাসিত হওয়া। বরং আত্মসমর্পণ না করে যা করা যায় তা হচ্ছে, নিজের উদ্যোগ থেকে নিজের কর্মের সংস্থান করা, যাকে এক কথায় বলা যায়- আত্ম কর্মসংস্থান। এভাবে যেমন নিজেদের কর্মের ব্যবস্থা করে হতাশাকে পরাস্ত করা সম্ভব, তেমন নিজেদের শ্রম ও সেবা দিয়ে দেশ ও জাতিকে উন্নত করা সম্ভব। আশার কথা, আজকাল আমাদের দেশের যুব সমাজের অনেকেই এই স্বেচ্ছা কর্মসংস্থানের ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে উঠছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে তুলছে ছোট খাটো অনেক প্রতিষ্ঠান। যেমন ধরা যাক, ফটোষ্ট্যাট ব্যবসার কথা। একজন যুবক কোন আত্মীয় বা বন্ধুর কাছ থেকে সংগৃহীত অথবা নিজ সঞ্চয়ে সামান্য কিছু পুঁজির ব্যবস্থা করার পর একটা ফটোষ্ট্যাট মেশিন ক্রয় করল। রাস্তার পাশে একটা দোকানের মধ্যে সেই মেশিন বসিয়ে দিব্যি জাঁকালো ব্যবসা চালু করাও সম্ভব। তাতে যেমন অনেক পুঁজি বিনিয়োগ দরকার পড়ে না, তেমন পরিকল্পনারও দরকার হয় না, অথচ এ ব্যবসার ওপর নির্ভর করে দিব্যি একটি সংসার চালানোর ব্যবস্থা করা যায়। এছাড়া কম্পিউটার স্থাপন, ছোট খাটো নার্সারী, হাঁস-মুরগীর ফার্ম এভাবে গড়ে তোলা যায়। ইদানিং আমাদের দেশে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে উৎসাহব্যঞ্জক হারে।

তবে একথা বলতে হয়, উন্নত বিশ্বের দেশসমূহে যেভাবে স্বেচ্ছা-কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে, এই প্রক্রিয়ার অধীনে বড় বড় কল-কারখানা পর্যন্ত গড়ে তোলা হয়েছে, আমাদের দেশে এখনও সে অবস্থার সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। অবশ্য এখানে অনেক সীমাবদ্ধতাও আছে। এখানে সেচ্ছামূলক কোন কর্ম করতে গেলে যে অর্থের প্রয়োজন পড়ে, তার ব্যবস্থা করাও বেশ কঠিন ব্যাপার। পরন্তু এসব ক্ষেত্রে লোকলজ্জার একটা বিষয়ও বেশ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

তদুপরি বলতে হয়, অতীতে স্বেচ্ছা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে যত সীমাবদ্ধতা ছিল, এখন তা নেই। পরন্তু এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও উৎসাহের হস্ত প্রসারিত করা হয়েছে। এখন সামনে যে সীমাবদ্ধতা, তা অতিক্রম করা যায় একটু চেষ্টাতেই। আর যুবসমাজ যেহেতু দেশের অন্যতম শক্তি, সেহেতু তাদের পক্ষে এই চেষ্টাটুকু করা তেমন কোন কষ্টকর ব্যাপার নয়। এখন যুবসমাজ যদি এই স্বেচ্ছা কর্মসংস্থানের ব্যাপারে আরো ব্যাপকভাবে সাড়া দেয়, তাহলে তা হবে দেশ ও জাতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। দেশ ও জাতি এতে উপকৃতও হবে খুব বেশি।

(১৯৯৩ সালে লক্ষ্মীপুর বার্তা পত্রিকার জুন সংখ্যায় মুদ্রিত)