Sun Sun Sun Sun Sun
English

পেছনে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন ইবলিশের অনুসারী না হয়ে মান-হুশ হোন

|| ড. এম হেলাল ||
যিনি প্রকৃত মানুষ, তিনি অন্যের পেছনে কথা বলেন না। পেছনে কথা বলা ইবলিশের কাজ। পেছনে কথা বললে কথা বাড়তে বাড়তে ব্যক্তিগত শত্রুতা তৈরি হয়। সামাজিক ও পারিবারিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। পরস্পর পরস্পরের শত্রু হয়ে সম্পর্ক চিরতরে নষ্ট হয়ে যায়। আর সামনে বসে চোখে চোখ রেখে কথা বললে কথা কমে যায়, প্রকৃত তথ্য প্রস্ফূটিত হয়ে সত্যে উপনীত হওয়া যায়। এতে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়, কঠিন সমস্যা কিংবা গুরুতর অভিযোগেরও নিষ্পত্তি হয়, এমনকি শত্রুও বন্ধুতে পরিণত হবার সুযোগ তৈরি হয়। তাই ইবলিশের মতো পেছনে কথা বলা কিংবা গীবত করা, তিলকে তাল বানানো, সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রণে কথা বলা, খারাপ কথা এককান থেকে সাতকান করা ইত্যাকার নেতিবাচকতা ও বিশৃঙ্খলা থেকে বিরত থাকুন। যেকোনো সমস্যায়ই পরস্পর পরস্পরের সামনে বসে আলাপ করুন। প্রয়োজনে মধ্যস্ততাকারী রাখতে পারেন।

এতেও সমাধান না হলে এবং জরুরি মনে করলে ক্ষেত্রবিশেষে আইনি কোনো প্রক্রিয়ায় যেতে পারেন। কিন্তু অভিযুক্তকে আপনার অভিযোগ কিংবা সমস্যার কথা না জানিয়ে, তাকে আত্মপক্ষ সমর্থন কিংবা সংশোধনের সুযোগ না দিয়ে অন্য মানুষের সাথে সে বিষয়ে কথা বলা অনৈতিক, অন্যায় ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি। এভাবে পেছনে কথা বলে গীবত করা কঠিন গুনাহর কাজ এবং অমার্জনীয় অপরাধ, যা কোনো শিক্ষিত কিংবা সৎ ও জ্ঞানবান মানুষ কিছুতেই করতে পারে না।

গীবত এর কুঅভ্যাস একেবারেই ত্যাগ করুন। ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ আছে `আল-গীবাতু আসাদ্দু মিনাল জেনা` গীবত ব্যাভিচারের চেয়েও নিকৃষ্ট অপরাধ। নীতি-নৈতিকতার দিক বিবেচনা করে বলা যায় গীবত মানুষের সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্ককে বিনষ্ট করে দেয়। গীবত করার মধ্যে একশ্রেণির মানুষ বিকৃত তৃপ্তিলাভ করে। গীবত করতে করতে একসময় তার অবস্থা এমন দাঁড়ায় ভালো চিন্তা তার মাথায় আসে না, মিথ্যা ও সন্দেহে মস্তিষ্ক ভরপুর হয়ে তিনি হয়ে পড়েন রিএকটিভ, তৈরি হতে থাকে শত্রুতা; ইবলিশরূপ ধারণ করে উচ্ছৃঙ্খলা-বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে ব্যক্তিসম্পর্ক, সমাজ কিংবা পরিবার ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়।

এক ব্যক্তির হঠকারী এরূপ ইবলিশি কর্মকান্ডে ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে আমার দেখা একটি পরিবার। নিজের একান্ত ও হীনস্বার্থ চরিতার্থে তিনি তিলকে তাল বানিয়ে অন্যের বিরুদ্ধে বানোয়াট তথ্যের অভিযোগ সৃজন করে মানুষের কাছে প্রচার করতে থাকেন। অথচ যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার সাথে আলাপ-আলোচনা করতে একেবারেই রাজি হন না। এমনকি বহুজন বহুভাবে চেষ্টা করেও তাকে কিছুতেই সম্মুখ আলোচনায় বসাতে পারেনি। চোখে চোখ রেখে সম্মুখ আলোচনায় তথা অভিযোগ বলা-শুনা-নিষ্পত্তিতে তিনি একেবারেই নারাজ তথা ঘোর বিরোধী। ফলে তার কথিত অন্যের দোষত্রুটির উপলব্ধি, কিংবা সংশোধনের কোনো সুযোগই রইল না। ঐ অভিযোগের নিষ্পত্তি কিংবা আরেকজনের ত্রুটি সংশোধনের চেয়ে তার এক ব্যক্তির একক হীনস্বার্থ চরিতার্থে মরিয়া হয়ে উঠে তিনি ঘর-সংসার পর্যন্ত ভেঙ্গে দেন; অবোধ শিশু-সন্তানদের জীবন বিপন্ন করে দিতেও কুন্ঠিত হন না তিনি। এভাবে অন্যের পেছনে কথা বলায় কিংবা গীবত বা কুৎসা রটানোয় অভ্যস্ত হয়ে যারা শয়তানের রূপ ধারণ করে, তাদেরকে গঠনমূলক সুপথে কিংবা প্রোএকটিভ ও পজিটিভ এটিচিউডে নিয়ে আসা খুবই কঠিন।

তাই ভুল বোঝাবুঝি দেখা দিলেই আমরা আলোচনায় বসব, খোলা মন নিয়ে সম্মুখ কথা বলব; কিন্তু অন্যের পেছনে গীবত বা কুৎসা রটাব না। যিনি গীবত পছন্দ করেন, তিনি আপাতলাভে মনে মনে পুলকিত হলেও অন্যরা তার রং মেশানো গীবত ধীরে ধীরে কিংবা শেষতক বুঝতে পেরে তাকে অপছন্দ করতে থাকে, মনে মনে অভিসম্পাৎ দেয়। এমনকি নীতিবানরা অভিসম্পাৎ দিতে না চাইলেও তাদের দীর্ঘশ্বাসের সাথে ঐ ইবলিশের প্রতি অভিসম্পাৎ তৈরি হয়ে যায়।

মানুষ সমাজবদ্ধ জীব, সৃষ্টির সেরা, আশরাফুল মাখলুকাত। এ মানুষের মধ্যে যদি গীবত রটনাকারী-ইবলিশের অনুপ্রবেশ ঘটে, তাহলে তিনি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে থাকবেন। কালামে পাকে এরশাদ হয়েছে তোমরা ঐক্যের রজ্জু শক্ত করে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইও না। আল্লাহপাক এর এত সতর্কবাণী থাকার পরও কোনো কোনো মানুষ সেদিকে খেয়াল করছে না, গীবত করেই যাচ্ছে। সমাধানযোগ্য বিষয়াদিও জটিল করে তুলছে ইবলিশের প্ররোচনায়। মহান আল্লাহর কাছ থেকে ইবলিশ বিপুল ক্ষমতা চেয়ে নিয়েছে বান্দাদের বিপথগামী করা কিংবা ধোকা দেয়ার জন্য। তাই ইবলিশ থেকে সদাসতর্ক থাকতে হবে আমাদেরকে।

আসুন, আমরা আর ইবলিশ না হই কিংবা ইবলিশের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত না হই! সমাজ প্রগতির সার্থেই আমরা এরূপ ইবলিশ এড়িয়ে চলি এবং উচ্ছৃঙ্খল-বিশৃঙ্খল ও ইবলিশি কথা ও কাজ থেকে নিজকে বিরত রাখি।